ওয়ারেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি : কর্মক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মৃধা ফাউন্ডেশন লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসর প্রাপ্ত ভাস্কুলার সার্জন ডা: সৈয়দ শওকত হোসেন। গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় মৃধা বেঙ্গলি কালচারাল সেন্টারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মৃধা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও দার্শনিক ড. দেবাশীষ ও চিনু মৃধা তার হাতে এই পদক তুলে দেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন কমিটির কো অর্ডিনেটর জাহেদ জিয়ার সভাপতিত্বে এবং মৃদৃল কান্তি সরকারের সঞ্চলনায় এই সম্মাননা প্রদানকালে ড. দেবাশীষ মৃধা বলেন, তার হাতে এটি তুলে দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত গর্বিত। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুপ্রভাত মিশিগান সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি চিনু মৃধা।
ডা: সৈয়দ শওকত হোসেন মিশিগানে বাঙ্গালীদের কাছে একটি পরিচিত নাম। একজন ভালোবাসার মানুষ, বিপদে আপদে বাঙ্গালীর একটি আশ্রয় স্থল। সেই ১৯৭৩ সাল থেকে বাঙ্গালী সংষ্কৃতির ধারক এবং বাহক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে নিভৃতে। এই ক্ষণজন্মা মানুষটি ১৯৫০ সালে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৯৭২ সালে ঢাকা মেডিকেল থেকে ডাক্তারি পাশ করে ১৯৭৩ সালে আমেরিকায় চলে আসেন উচ্চ শিক্ষার জন্য। কিন্তু আমেরিকায় আসার পূর্বে সেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র থাকাবস্থাতেই স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করেছেন।
ডা: শওকত হোসেন একজন অবসর প্রাপ্ত ভাস্কুলার সার্জন। তিনি বহু বছর ধরে নিজস্ব ক্লিনিকে প্র্যাকটিস করেছেন পোর্ট হুরনে। বাংলা সংস্কৃতির প্রতি তাঁর রয়েছে গভীর ভালবাসা। মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়ে তিনি নাটক করছেন অনেক। মিশিগানে এসে এখানে গড়ে তুলেছেন Michigan Bengali Association। এক নাগাড়ে ৭ বছর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দায়িত্বকালে তিনি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে এই প্রবাসে উর্দ্ধে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বিচিত্রা নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রনী ভুমিকায় ছিলেন তিনি। BMANA, and BMANA Michigan Chapter এ দুটি অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা মেম্মার এবং প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।
মিশিগানে এপার বাংলা এবং ওপার বাংলা থেকে বিশিষ্ট শিল্পী এনে বছরের পর বছর দর্শক শ্রোতাদের নির্মল আনন্দ দিয়েছেন তিনি। গ্রীষ্মের সবচেয়ে সুন্দর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি সব সময় তাঁর পোর্ট হুরনের বাসভবনে আয়োজন করা হতো। প্রত্যেকটি সার্থক পুরুষকে পিছন থেকে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেন একজন মহিয়সী নারী আর তিনি হলেন তাঁর প্রিয়তম সহধর্মিনী ডক্টর ফাতেমা হোসেন। মিশিগানে যতগুলো বড় এবং সুন্দর বাংলা সাংস্কৃতিক এবং ডাক্তারদের জাতীয় অনুষ্ঠান হয়েছে তার মূলে ছিলেন তিনি। পৃথিবীতে অনেক মানুষ থাকে যারা সারাটা জীবন দিয়ে মানুষের উপকার করে যান, ডা: সৈয়দ শওকত হোসেন হলেন তাদেরই একজন। বর্তমানে ডা: শওকত হোসেন পরিবারের সবাইকে নিয়েমিশিগানের পোর্টহুরন শহরে অবসর জীবন যাপন করছেন। পাঁচ সন্তানের জনক এ দম্পতি। দুই ছেলে আর তিন মেয়ে।